চকরিয়া-পেকুয়া ও লামায় ঢলের পানিতে নিমজ্জিত ঘরবাড়ি ও বিদ্যালয়ের দৃশ্য
জাকের উল্লাহ চকোরী, চকরিয়া ::
গত ৩দিনের টানা ভারী বর্ষণে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলের পানিতে লামা, চকরিয়া, পেকুয়া উপজেলার অন্তত ৩০টি ইউনিয়নের শতাধিক গ্রামের লাখো মানুষ পানি বন্দি হয়ে পড়েছে। এ ৩ উপজেলার মধ্যেদিয়ে প্রবাহিত মাতামুহুরী নদীর অব্যহত ভাঙ্গনে নদীর দু’তীরের অসংখ্য ঘর বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্টান, বিলিন হয়ে গেছে। শতাধিক ঘরবাড়ি বর্তমানে হুমকির সম্পূকে। ওই ৩ উপজেলার শিক্ষা প্রতিষ্টান, মসজিদ মাদ্রাসায় ঢলের পানি ঢুকে পড়ায় পাঠ দান ব্যাহত হচ্ছে। এদিকে কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড ২শ ৭৫ কোটি টাকা ব্যয়ে বাঁধ মেরামত, প্রতিরক্ষামূলক কাজসহ যেসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে এতে নানা অনিয়ম ও দূর্নীতির কারণে নদীর তীরবর্তী মানুষ গুলো কোন সুফল পাচ্ছেনা। স্থানীয় জনগন অভিযোগ করেছেন, বালির বস্তা দিয়ে নদীর বন্যা ঠেকানোর জন্য যেসব প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে এতে চলছে পুকুর চুরি। বরাদ্দকৃত টাকা সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার ও পাউবোর দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা জুলাই মাসে জুন ক্লোজিয়ের নামে ভাগভাটোয়ারায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।
বর্তমানে ঢলের পানিতে লামা উপজেলার লামা সদর, পৌরসভা,গজালিয়া, ফাঁসিয়াখালী ও চকরিয়া উপজেলার বমুবিলছড়ি, সুরাজপুর-মানিকপুর, ফাঁসিয়াখালী, কাকারা, লক্ষ্যাচর, কৈয়ারবিল, বরইতলী, হারবাং, সাহারবিল, খুটাখালী, ডুলাহাজারা, চকরিয়া পৌরসভা, পূর্ববড়ভেওলা, পশ্চিম বড়ভেওলা, বদরখালী, ডেমুশিয়া, কোনাখালী, চিরিঙ্গা ইউনিয়ন, পেকুয়া উপজেলার শীলখালী, বারবাকিয়া, টৈইটং, পেকুয়া সদর, মগনামা ও উজান টিয়া ইউনিয়নের কয়েকশত গ্রামে লাখো মানুষ এখন পানিবন্দি অবস্থায় মানবেতর জীবন যাপন করছে। এসব উপজেলার অব্যাতরিন সড়ক গুলো ঢলের পানিতে নিমজ্জিত হওয়ায় যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
এদিকে চকরিয়া পৌরসভার ৯ নং ওয়ার্ড ও ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের দিগরপানখালী গ্রামের মধ্যদিয়ে পাউবোর ১নং গাইড বাঁধে বোল্ডড্রোজার দিয়ে রাস্তার পাশে মাটি ভরাট করায় মাতামুহুরী নদীর ঢলের পানি স্বাভাবিক গতিতে চলাচল করতে না পারায় ইতিমধ্যে দিগরপানখালী গনি সিকদার পাড়া ২টি বাড়ি ভেঙ্গে নদীতে বিলিন হয়ে গেছে। বর্ষন অব্যহত থাকলে আরো অসংখ্য ঘরবাড়ি যে কোন মুহুর্তে নদীগর্ভে তলিয়ে যাওয়ার আশংকা রয়েছে।
চকরিয়া পৌরসভার মেয়র আলমগীর চৌধুরী বলেন, ভারী বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডের প্রায় ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। মেয়র আরো বলেন, বর্তমানে পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের আমান্নার চর, মাঠপাড়া, জেলেপাড়া, তরচভাঙ্গা, ২নং ওয়ার্ডের জালিয়াপাড়া, হালকাকারা, ৩নং ওয়ার্ডের বাটাখালী, ফুলতলা, ৪নং ওয়ার্ডের কাহারিয়া ঘোনা, ৫নং ওয়ার্ডের করিয়াঘোনা, ৬নং ওয়ার্ডের কাহারিয়া ঘোনা ও খামারপাড়া, ৮নং ওয়ার্ডের নামার চিরিঙ্গা, কোচপাড়া, হাজিয়ান, ও ৯ নং ওয়ার্ডের দিগরপানখালী এক নম্বর বাঁধ এলাকাসহ লোকালয়ে ঢুকে পড়ে নদীর পানি।
উপজেলার সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিনের বাসিন্দা ও চট্টগ্রামস্থ চকরিযা সমিতির সাধারণ সম্পাদক এম,হামিদ হোসাইন বলেন, ভারী বর্ষণের কারনে মাতামুহুরী নদীতে বেড়ে চলছে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানি। ইতোমধ্যে নদীর পানি ঢুকে তাঁর ইউনিয়নের ৩ শতাধিক পরিবারের বসতঘর প্লাবিত হয়ে পড়েছে। এসব এলাকায় জরুরী ভাবে ত্রাণ সামগ্রী পৌছাঁনোর দাবী জানিয়েন তিনি।
বরইতলী ইউপি চেয়ারম্যান জালাল আহমদ সিকদার বলেন, ভারী বৃষ্টিপাতে মাতামুহুরী নদীতে তাঁর ইউনিয়নের গোবিন্দপুর, ডেইঙ্গাকাটা, রসুলাবাদসহ একাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়ে গেছে। এলাকার দুর্গত জনসাধারণ বর্তমানে পানিবন্দি হয়ে পড়ার কারনে চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে।
কোনাখালী ইউপি চেয়ারম্যান ও বিএমচর ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, ভারী বর্ষণের ফলে মাতামুহুরী নদীতে পানি বেড়ে দুই ইউনিয়নের প্রায় হাজারো পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
চিরিঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, দুইদিনের ভারী বৃষ্টিপাতে মাতামুহুরী নদীতে পাহাড়ি ঢলের প্রবাহ বাড়ায় তার ইউনিয়নের চিংড়িজোনের শত শত চিংড়ি প্রকল্প পানিতে তলিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।
খুটাখালী ইউপি েেচয়ারম্যান বলেন, তার ইউনিয়নের পেইজ্জাকাটা, হরইখোলা,, নাপিতখালী, চড়িবিল, ফরেষ্ট অফিস, মাইজপাড়া, জলদাশ পাড়া, পাগলির বিল এলাকায় পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়ে। বর্তমানে কয়েশ পরিবার খাবার ও পানি সংকটে পড়েছে।
এদিকে চকরিয়ার পাশ^বর্তী লামা বান্দরবানের লামায় গত তিন দিনের বৃষ্টিপাতে পাহাড় থেকে নেমে আসা পানিতে সৃষ্ট বন্যা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে। লামা উপজেলা চেয়ারম্যান থোয়াইনু অং চৌধুরী জানিয়েছেন, ইতিমধ্যে পানিবন্ধি হয়ে পড়েছে উপজেলার প্রায় ৫০ হাজার মানুষ। পাহাড়ে ঝুঁকিতে বসবাসকারী ও পনিবন্ধি মানুষকে নিরাপদে সরে যেতে সরকারী ভাবে মাইকিং করা হয়েছে। সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সরকারী স্থাপনাকে আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা জন্য বলা হয়েছে।
লামা পৌরসভার মেয়র মোঃ জহিরুল ইসলাম বলেছেন, লামা বাজার সহ পৌর এলাকার এখন পানির নিচে। সোমবার থেকে পানিবন্ধি মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। নৌকা দিয়ে মানুষ চলাচল করছে। শুধুমাত্র পৌর এলাকায় প্রায় ২০ হাজার মানুষ পানিবন্ধি হয়ে পড়েছে।
রুপসীপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান ছাচিং প্রু মার্মা জানান, পাহাড়ি ঢলে সমগ্র এলাকা এখন পানির নিচে। পানি আরো বাড়বে। পাহাড়ি বাঙ্গালী মানুষের দূর্ভোগ চরমে।
৩নং ফাঁসিয়াখালী ইউপি চেয়ারম্যান জাকের হোসেন মজুমদার বলেন, সোমবার থেকে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। প্রচুর স্থানে পাহাড় ধস হয়েছে তবে প্রাণহানির খবর পাওয়া যায়নি। এসময় ত্রাণের প্রয়োজন ছিল। অধিকাংশ মানুষ ক্ষয়ক্ষতির শিকার।
লামা বাজার ব্যবসায়ী কমিটির সাধারণ সম্পাদক জাপান বড়–য়া বলেন, যে পরিমাণ পানি হয়েছে তাতে শুধুমাত্র বাজার ব্যবসায়ীদের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ হবে কয়েক কোটি টাকা। মাতামুহুরী নদীর গতিপদ পরিবর্তন ছাড়া বারবার সৃষ্ট এই বন্যা ঠেকানো সম্ভব নয়। এইরকম পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীদের আশ্রয়ের কোন জায়গা নেই। লামা বাজারে একটি আশ্রয় কেন্দ্র করা প্রয়োজন।
সরজমিনে ঘুরে দেখা যায়, লামা সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়, আদর্শ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, ফাজিল মাদ্রাসা, নুনার বিল ও চেয়ারম্যান পাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৮/৯ শতাধিক পানিবন্ধি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। সেখানে জরুরী খাবার ও পানির প্রয়োজন বলে ভুক্তভোগীরা জানায়।
লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার বলেন, আমরা সচেষ্ট রয়েছি। যে কোন দূর্ঘটনার খবর পাওয়া মাত্র সহায়তায় করার জন্য ফায়ার সার্ভিস ও অন্যান্য সহযোগি প্রতিষ্ঠানকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। খাদ্য গুদামে প্রায় একশত মেট্রিক টন চাল ও গম মজুদ রয়েছে।
প্রকাশ:
২০১৭-০৭-০৪ ১৩:৫১:১৬
আপডেট:২০১৭-০৭-০৪ ১৩:৫১:১৬
- তামাকের ব্যবহার কমাতে শক্তিশালী কর পদক্ষেপ ও আইনের বিকল্প নেই
- চকরিয়ায় পুকুরে গোসল করতে নেমে পানিতে ডুবে দুই বোনের মর্মান্তিক মৃত্যু
- মাতামুহুরী নদীতে ১২ বসতঘর, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে ত্রাণ বিতরণে জেলা প্রশাসক
- নাইক্ষংছড়িতে টানা ৩দিন বৃষ্টির পানিতে ১৪ গ্রাম প্লাবিত
- চকরিয়ায় দুই দিনের ভারী বৃষ্টিতে নিন্মাঞ্চল প্লাবিত, ভয়াবহ বন্যার আশঙ্খা
- চকরিয়ায় উপজেলা পরিষদের পুকুরে ডুবে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীর মৃত্যু
- চকরিয়ায় সমিতির নামে অসহায় পরিবারের দশ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ
- জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ৬ হাজার ছাড়িয়েছে জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ৬ হাজার ছাড়িয়েছে
- কিশলয় স্কুলের কেরানী সেলিম কর্তৃক শিক্ষক লাঞ্চিত
- চকরিয়ায় আওয়ামী লীগ নেতার অফিস থেকে শটগান ও ২৮রাউন্ড কার্তুজ উদ্ধার
- চকরিয়ায় উপজেলা পরিষদ এলাকায় সরকারি জায়গা দখল নিয়ে উত্তেজনা, হট্টগোল হাতাহাতি
- জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ৬ হাজার ছাড়িয়েছে জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ৬ হাজার ছাড়িয়েছে
- কিশলয় স্কুলের কেরানী সেলিম কর্তৃক শিক্ষক লাঞ্চিত
- চকরিয়ায় দুই দিনের ভারী বৃষ্টিতে নিন্মাঞ্চল প্লাবিত, ভয়াবহ বন্যার আশঙ্খা
- চকরিয়ায় মসজিদের উঠান থেকে কাফনের কাপড়সহ কার্টুনভর্তি নবজাতকের মরদেহ উদ্ধার
- মাতামুহুরী নদীতে ১২ বসতঘর, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে ত্রাণ বিতরণে জেলা প্রশাসক
- চকরিয়ায় পুকুরে গোসল করতে নেমে পানিতে ডুবে দুই বোনের মর্মান্তিক মৃত্যু
- নাইক্ষংছড়িতে টানা ৩দিন বৃষ্টির পানিতে ১৪ গ্রাম প্লাবিত
- চকরিয়ায় উপজেলা পরিষদ এলাকায় সরকারি জায়গা দখল নিয়ে উত্তেজনা, হট্টগোল হাতাহাতি
- চকরিয়ায় আওয়ামী লীগ নেতার অফিস থেকে শটগান ও ২৮রাউন্ড কার্তুজ উদ্ধার
- চকরিয়ায় সমিতির নামে অসহায় পরিবারের দশ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ
- চকরিয়ায় উপজেলা পরিষদের পুকুরে ডুবে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীর মৃত্যু
পাঠকের মতামত: